ভ্রমন বাংলাদেশঃ শরীয়তপুর জেলা(প্রজন্মের ভ্রমন বাংলাদেশ সিরিজের একটা অংশ ।)1 min read

বহুদিন ধরে এটা নিয়ে লিখব লিখব করেও লেখা হচ্ছিল না । আসলে ছবি গুলো আনএক্সপেক্টেড ভাবে হারিয়ে যাওয়ার ফলে খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম।। যাক এখন আসল কথায় আসি।আমার জন্মস্থান এর কথা ।

শরীয়তপুর সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ
১। ইতিহাসঃ ইতিহাস সমৃদ্ধ বিক্রমপুরের দক্ষিণাঞ্চল এবং প্রাচীন বরিশালের ইদিলপুর পরগণার কিছু অংশ নিয়ে বর্তমান শরীয়তপুর জেলা গঠিত। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে শরীয়তপুরবাসীর ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জেলাটি ফরিদপুরের মাদারীপুর মহকুমার অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়ত উল্লাহর নামানুসারে শরীয়তপুর  নামকরণ করা হয়। ১৯৮৪ সালে শরীয়তপুর জেলায় উন্নীত হয়।^১

২।ভৌগলিক অবস্থানঃ শরিয়তপুর জেলার উত্তরে মুন্সীগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে বরিশাল জেলা ও ঝিনাইদহ জেলা, পুর্বে চাঁদপুর জেলা এবং পশ্চিমে মাদারীপুর জেলা।^২

৩।প্রশাসনিক এলাকাসমুহঃ শরিয়তপুর জেলা ৭টি উপজেলা, ৫টি মিউনিসিপ্যালিটি, ৬৪টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৪৫টি ওয়ার্ড, ৯৩টি মহল্লা, ১২৩০টি গ্রাম এবং ৬০৭টি মৌজা নিয়ে গঠিত।
এই জেলা ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এগুলো হল,
জাজিরা উপজেলা
শরিয়তপুর সদর উপজেলা
গোসাইরহাট উপজেলা
ডামুড্যা উপজেলা
ভেদরগঞ্জ উপজেলা
নড়িয়া উপজেলা
সখীপুর উপজেলা^২

ঢাকা হতে যাতায়াত পদ্ধতিঃ
ঢাকা হতে শরীয়তপুর জেলায় দুইভাবে যাওয়া যায়ঃ
১। সায়াদাবাদ বাসস্টান্ড হতে।
২। গুলিস্তান হতে।
আপনাকে প্রথমে গুলিস্তান অথবা সায়াদাবাদ পৌছাতে হবে। এরপর মাওয়া ঘাট এর বাস এ উঠতে হবে। অনেক পরিবহন পাবেনঃ বি আর টী সি, ইলিশ, গ্রেট বিক্রমপুর,আনন্দ ইত্যাদি। এরপর আপনাকে লঞ্চে অথবা স্পীডবোটে পদ্মা পার হতে হবে। মংগল মাঝির ঘাটের লঞ্চ অথবা স্পীডবোট দিয়ে যাবেন।মঙ্গল মাঝি ঘাটে পৌছানোর পর শরীয়তপুর এর বাস,মোটরসাইকেল এবং টেম্পু পাবেন।

দর্শনীয় স্থানঃ

মগরঃ প্রখ্যাত কবি ও গীতিকার অতুল প্রসাদ সেনের জন্মস্থান। মাতৃভাষা বাংলার প্রতি তাঁর
গভীর শ্রদ্ধা । তাঁর রচিত অমর গান ‘‘মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা’’^১

মহিষারের দীঘিঃ দক্ষিণ বিক্রমপুরের এককালীন প্রখ্যাত স্থান। চাঁদ রায়, কেদার রায়ের নির্দেশে এখানে পানীয় জলের জন্য কয়েকটি দীঘি খনন করা হয়েছিল বলে জানা যায়। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ হতে এখানে এক সপ্তাহের জন্য মেলা হয়। দিগম্বরী সন্ন্যাসীর মন্দিরও এখানে রয়েছে। সুপ্রসিদ্ধ নৈয়ায়িক গঙ্গাচরণ ন্যায় রত্নের বাসস্থান। লোকমুখে শুনা যায় এই দিঘী থেকে নাকি দরিদ্রদের বিয়ের সময় দিঘীর কাছে চাইলে থালা বাসন এবং খাবার জিনিস আসত । কিন্তু একবার জণৈক মহিলা একটা প্লেট রেখে দেয়ার পর এখন আর আসে না।

রাজনগরঃ বৈদ্য প্রধান স্থান। ফরিদপুরের ইতিহাস লেখক আনন্দ চন্দ্র রায়, ঢাকার ইতিহাস লেখক যতীন্দ্র নাথ রায় ও ঢাকার বিশিষ্ট উকিল গুপ্ত এর জন্মস্থান। এখানকার অভয়া ও শিবলিঙ্গ বিখ্যাত।

কুরাশিঃ রাজা রাজবল্ল¬ভের বংশধরগণের কেউ কেউ এখানে বাস করতেন বলে জানা যায়। বেশ কয়েকটি মন্দির ও শিবলিঙ্গ মূর্তি এখানে রয়েছে।

বুড়ির হাটের মসজিদঃ জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার বুড়ির হাট মসজিদটি খুবই বিখ্যাত এবং ইসলামী স্থাপত্যকলার নিদর্শন।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ ঢাকা থেকে মাওয়া আসার পর লঞ্চ, সী-বোট, ট্রলার বা ফেরী যোগে নদী পারাপার হয়ে মাঝির ঘাট। মাঝির ঘাট থেকে বাস যোগে সরাসরি শরীয়তপুর সদর হয়ে বুড়ির হাট মসজিদ।
সম্ভাব্য খরচঃ২০০(দুইশত)টাকা।
আবাসন ব্যবস্থাঃ শরীয়তপুর সদর ব্যতীত বুড়ির হাট থাকার কোন সু-ব্যবস্থা নেই।

হাটুরিয়া জমিদার বাড়িঃ
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ ঢাকা থেকে মাওয়া আসার পর লঞ্চ, সী-বোট, ট্রলার বা ফেরী যোগে নদী পারাপার হয়ে মাঝির ঘাট। মাঝির ঘাট থেকে বাস যোগে সরাসরি শরীয়তপুর সদর হয়ে গোসাইরহাট উপজেলার হাটুরিয়া জমিদার বাড়িতে যাওয়া যাবে।
সম্ভাব্য খরচঃ ২৫০ (দুইশত পঞ্চাশ) টাকা।
আবাসন ব্যবস্থাঃ গোসাইরহাট উপজেলায় থাকা খাওয়ার কোন সু-ব্যবস্থা আছে।

রুদ্রকর মঠঃ দেড়শত বছরের পুরনো এই মঠটি শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নে অবস্থিত। এই মঠটি দেখার জন্য বহু লোক আসে।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ ঢাকা থেকে মাওয়া আসার পর লঞ্চ, সী-বোট, ট্রলার বা ফেরী যোগে নদী পারাপার হয়ে মাঝির ঘাট। মাঝির ঘাট থেকে বাস যোগে সরাসরি শরীয়তপুর সদর বাসস্টান্ড থেকে মনোহর বাজার দিয়ে বালার বাজার নেমে রুদ্রকর মঠ যাওয়া যাবে।
সম্ভাব্য খরচঃ ২০০ (দুইশত) টাকা আবাসন ব্যবস্থাঃ শরীয়তপুর সদর উপজেলায় থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা আছে।

রাম সাধুর আশ্রমঃ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নে অবস্থিত। এখানে শত বছরের পুরানো এই আশ্রমটি এই ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নই গোলক চন্দ্র সার্বভৌম ও শ্রীযুক্ত কালি কিশোর স্মৃতি রত্ন মহাশয়ের বাসস্থান। প্রতি বছর শীতের শেষে এই আশ্রমকে কেন্দ্র করে তিন দিনের মেলা বসে। এ ছাড়াও ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের হোগলা গ্রামের কার্তিকপুরের জমিদার বাড়ি বিখ্যাত।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ ঢাকা থেকে মাওয়া আসার পর লঞ্চ, সী-বোট, ট্রলার বা ফেরী যোগে নদী পারাপার হয়ে মাঝির ঘাট। মাঝির ঘাট থেকে বাস যোগে সরাসরি নড়িয়া উপজেলার হয়ে ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের রামসাধুর আশ্রমে যাওয়া যাবে।
সম্ভাব্য খরচঃ ২২০ (দুইশত বিশ) টাকা
আবাসন ব্যবস্থাঃ নড়িয়া উপজেলা ও রামসাধুর আশ্রমে থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা আছে।

জমিদার বাড়ীঃ শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত ছয়গাঁও ইউনিয়নে জমিদার বাড়ী অবস্থিত।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ ঢাকা থেকে মাওয়া আসার পর লঞ্চ, সী-বোট, ট্রলার বা ফেরী যোগে নদী পারাপার হয়ে মাঝির ঘাট। মাঝির ঘাট থেকে বাস যোগে সরাসরি ভেদরগঞ্জ উপজেলা হয়ে ছয়গাঁও ইউনিয়নের জমিদার বাড়ীতে যাওয়া যাবে।
সম্ভাব্য খরচঃ ২৫০ (দুইশত পঞ্চাশ) টাকা
আবাসন ব্যবস্থাঃ ভেদরগঞ্জ উপজেলায় থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা আছে।

মানসিংহের বাড়ীঃ নড়িয়া উপজেলায় ফতেজংগপুর ঐতিহাসিক মানসিংহের দুর্গের ভগ্নাবশেষ রয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ ঢাকা থেকে মাওয়া আসার পর লঞ্চ, সী-বোট, ট্রলার বা ফেরী যোগে নদী পারাপার হয়ে মাঝির ঘাট। মাঝির ঘাট থেকে বাস যোগে সরাসরি নড়িয়া উপজেলার হয়ে ফতেজংগপুর ইউনিয়নের মানসিংহের দুর্গের ভগ্নাবশেষ এর স্থানে পৌছানো যাবে।
সম্ভাব্য খরচঃ ২৫০ (দুইশত পঞ্চাশ) টাকা
আবাসন ব্যবস্থাঃ নড়িয়া উপজেলায় থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা আছে।

শিবলিঙ্গঃ উপমহাদেশের শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নে কষ্ঠিপাথরের সর্ববৃহৎ শিবলিঙ্গটি পাওয়া গেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ ঢাকা থেকে মাওয়া আসার পর লঞ্চ, সী-বোট, ট্রলার বা ফেরী যোগে নদী পারাপার হয়ে মাঝির ঘাট। মাঝির ঘাট থেকে বাস যোগে সরাসরি নড়িয়া উপজেলার  ভোজেশ্বর এর শিবলিঙ্গের কাছে পৌছানো যাবে।
সম্ভাব্য খরচঃ ২০০ (দুইশত) টাকা
আবাসন ব্যবস্থাঃ নড়িয়া উপজেলায় থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা আছে।

সুরেশ্বর দরবার শরীফঃ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বরে মাওলানা জান শরীফের মাজার অবস্থিত। এখানে প্রতি বছর শীতের শেষে তিন দিনের ওরশ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় এবং বহু ভক্তের সমাগম হয়।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ ঢাকা থেকে মাওয়া আসার পর লঞ্চ, সী-বোট, ট্রলার বা ফেরী যোগে নদী পারাপার হয়ে মাঝির ঘাট। মাঝির ঘাট থেকে বাস যোগে সরাসরি নড়িয়া উপজেলায় পৌছানোর পর ট্যাম্পু বা বেবী যোগে সুরেশ্বর দরবার শরীফ এ পৌছানো যাবে অথবা ঢাকার সদর ঘাট হতে লঞ্চ যোগে সরাসরি সুরেশ্বর লঞ্চ ঘাটে নামার পর রিক্সা যোগে দরবার শরীফ এ যাওয়া যাবে।
সম্ভাব্য খরচঃ ২০০ (দুইশত) টাকা, নদী পথে ১০০ (একশত) টাকা।
আবাসন ব্যবস্থাঃ নড়িয়া উপজেলাসহ উক্ত দরবার শরীফে থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা আছে।

পন্ডিতসারঃ এই স্থানে শ্যামপুরি হুজুরের মাজার শরীফ অবস্থিত। পৃথিবীর বহুস্থান থেকে এখানে লোক সমাগম হয়ে থাকে। প্রতি বছর ১১ পৌষ হতে তিন দিনের ওরস হয়। এ ছাড়া  পহেলা জ্যৈষ্ঠ তারিখে হযরত শাহ্ সূফি সৈয়দ গোলাম মাওলা হোসায়নী চিশতী শ্যামপুরী (র:) বা শ্যামপুরী হুজুর এর আবির্ভাব দিবস হিসেবে রোজে মোকাদ্দাস দিবস হিসাবে পালিত হয়।এছাড়াও এখানে ১০০ বছরের ও বেশি পুরোনো পন্ডিতসার উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ ঢাকা থেকে মাওয়া আসার পর লঞ্চ, সী-বোট, ট্রলার বা ফেরী যোগে নদী পারাপার হয়ে মাঝির ঘাট। মাঝির ঘাট থেকে বাস যোগে সরাসরি নড়িয়া উপজেলায় পৌছানোর পর ট্যাম্পু বা বেবী যোগে পন্ডিতসার মাজার শরীফ এ পৌছানো যাবে অথবা ঢাকার সদর ঘাট হতে লঞ্চ যোগে সরাসরি সুরেশ্বর লঞ্চ ঘাটে নামার পর ট্যাম্পু যোগে পন্ডিতসার মাজার শরীফ এ যাওয়া যাবে।
সম্ভাব্য খরচঃ ২৪০ (দুইশত চল্লিশ) টাকা, নদী পথে ১৫০ (একশত পঞ্চাশ) টাকা।
আবাসন ব্যবস্থাঃ নড়িয়া উপজেলাসহ উক্ত মাজার শরীফে থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা আছে।

ধানুকার মনসা বাড়িঃ চন্দ্রমনি ন্যায়, ভুবন হরচন্দ্র চুড়ামনি ও মহোপাধ্যায়, শ্রীযুক্ত বামাচরণ ন্যায় প্রভৃতির জন্মস্থান ধানুকায়। এখানকার শ্যামমূর্তি জাগ্রত দেবতা বলে কিংবদন্তী রয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ ঢাকা থেকে মাওয়া আসার পর লঞ্চ, সী-বোট, ট্রলার বা ফেরী যোগে নদী পারাপার হয়ে মাঝির ঘাট। মাঝির ঘাট থেকে বাস যোগে সরাসরি শরীয়তপুর সদর উপজেলায় আসার পর রিক্সা যোগে ধানুকা মনসা বাড়ি যাওয়ার সু-ব্যবস্থা আছে।
সম্ভাব্য খরচঃ ১৮০ (একশত আশি) টাকা।
আবাসন ব্যবস্থাঃ শরীয়তপুর সদর উপজেলায় থাকা ও খাওয়ার সু-ব্যবস্থা আছে।

সুত্রঃ ১। শরীয়তপুর জেলার সরকারি ওয়েবসাইট।
২। শরীয়তপুর জেলার উইকিপিডিয়া পেজ ।

বিঃদ্রঃ পুর্বে প্রজন্ম ফোরামে প্রকাশিত