ক্যাম্পাস এবং আমার সম্পর্কে স্বপ্নিল ভাইয়ের লেখাঃ
আজকের অতিথি আমাদের সবার চেনা জানা মুখ ত্রিনিত্রির রাশিমালা বা ফিরোজ। সে পড়াশোনা করছে NHTTI (NATIONAL HOTEL & TOURISM TRAINING INSTITUTE) তে।
আমি খুব অসুস্থ থাকায় তাকে খুব একটা সাহায্য করতে পারিনি, এজন্য আন্তরিকভাবে দু:খিত। তার উত্তরগুলো বেশ গোছানো, আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে, আর ছবিগুলোও বেশ সুন্দর। আমি ফিরোজের উপর বেশ সন্তুষ্ট। আমি শুধু ফিরোজের জন্যই অনলাইনে এসে এ টপিক করলাম, নাহলে টপিক খোলার মত অবস্থা আমার নেই। অসুস্থতার কারণে এর বেশি কিছু বলছি না। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
ক্যাম্পাস সম্পর্কে কিছু কথা………
-NHTTI এর সম্পর্কে প্রথম বলেন আমার বাবা। তারপর কিছুটা ইন্টারনেট ঘেটে খবর বের করে ভর্তি ফর্ম নিলাম। তারপর আরকি ভর্তি পরীক্ষা ,ভাইভা। ভাবিনি এটায় চান্স পাব। ভাবি নি কোর্স টা গতানুগতিক পড়ালেখার মত নয় , ভাবি নি এটা একটা প্রফেশনাল ইন্সটিটিঊট। আর হ্যা এটা কে আমি ও আমার ক্যাম্পাস সিরিজে দেয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত তাও ভাল করে ভাবিনি। NHTTI (NATIONAL HOTEL & TOURISM TRAINING INSTITUTE) হল এমন একটা প্রতিষ্ঠান যার গতানুগতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একাধিক ক্যাম্পাস নেই। আছে একটি যথার্থ সুযোগ সুবিধাযুক্ত ক্যাম্পাস, গুটিকয়েক ছাত্র-ছাত্রী এবং খুবই মানসম্মত (কম বলা হয়ে গেল) কয়রকজন শিক্ষক।সুযোগ সুবিধার মধ্যে শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাসরুম, কম্পিঊটার ল্যাব, প্রফেশনাল কিচেন, অডিও ভিজুয়াল ল্যাব, প্রফেশনাল বই এবং জানার জন্য যথেষ্ট বই সম্পন্ন একটি লাইব্রেরী ও ব্যাক্তিগত রেকর্ডিং বুথ সহ ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব এর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
বর্তমানে পড়ালেখার বিষয়….……
-আমি পড়ছি ডিল্পোমা ইন হোটেল ম্যানেজম্যান্ট এ। কোর্সের সময় ২ বছর। ইন্সটিটিউটের সবচেয়ে বড় কোর্স এটা। একটা পাঁচ তারা হোটেল এর সকল সুযোগ সুবিধাধি সম্পর্কে জানা এবং সুযোগ সুবিধাদি দেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয় এই কোর্সে। আমাদের কোর্সে চারটা সেমিস্টার। প্রতিটি সেমিস্টার ২৪ সপ্তাহ করে।
সেমিস্টারসমুহ হচ্ছেঃ
১। ফ্রন্ট অফিস এন্ড সেক্রেটারিয়াল অপারেশন এবং হাউসকিপিং।
২। ফুড এন্ড বেভারেজ প্রোডাকশন এন্ড সার্ভিস এবং বেকারি এন্ড পেস্ট্রি প্রোডাকশন।
৩। সুপারভাইজিং এবং ট্যুরিজম
৪। ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট ।
খরচের কথা বাদ দেই কেন। দুই বছরের এই আন্তর্জাতিক মানের (ILO স্বীকৃত) এই কোর্সের জন্য খরচ হবে ১ লক্ষ ৬০,০০০(৭০,০০০+৩০,০০০+৩০,০০০+৩০,০০০)
এছাড়াও আপনি চাইলে ১৬ সপ্তাহের ন্যাশনাল সার্টিফিকেট কোর্স করতে পারেন যেকোন একটি বিষয়ের উপর। বিষয়গুলো হলঃ
১। ফ্রন্ট অফিস।
২। হাউসকিপিং।
৩।ফুড এন্ড বেভারেজ প্রোডাকশন।
৪। ফুড এন্ড বেভারেজ সার্ভিস।
৫।বেকারী ও পেস্ট্রি প্রোডাকশন।
এবং আরো দুইটি এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স রয়েছে। কোর্সগুলো হলঃ
১। ডিল্পোমা ইন ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম।
২। প্রফেশনাল সেফ কোর্স।
বর্তমান সেমিস্টার যেমন যাচ্ছে….…
– কয়েকদিন আগে বর্তমান সেমিস্টার শুরু করেছি । আমি বর্তমানে ২য় সেমিস্টারে।আগেই যেহেতু কয়েকটা বিষয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল না এবং সেই বিষয়গুলোর কিছু অংশ ছাড়া পড়তে তেমন মজা পাই না তাই প্রথম দিককার ক্লাস গুলো একধরনের ঘুমিয়েই কেটেছে। তবে এখন মজা পাওয়া শুরু করেছি ( বিষয়গুলো যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা না) কিন্তু রোজার চাপে আবার অনেক কিছুই মাথায় ঢুকে না । গত সেমিস্টার বেশ ভালই কাটিয়েছি। ফলাফল ও ভাল হবে । দেখা যাক এই সেমিস্টারে কি হয়। বিশেষ করে ফুড প্রোডাকশনের প্রাক্টিকেল পরীক্ষাগুলোতে একটা ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা । তার উপর মাথায় প্রতি ছূটির দিনে আছে কেননা রান্নাবান্না আমার কম্ম নয় । ইউনিফর্ম ধোয়ার বাড়তি চাপ তো আছেই।
ক্যাম্পাসে প্রিয় টিচার, বন্ধু বান্ধব ও অন্যান্য কাছের মানুষ যারা আছে তাদের সম্পর্কে……
– প্রথমেই আসি শিক্ষক সম্পর্কে। কয়েকদিন আগে প্রিয় শিক্ষক নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছিল(ছাত্ররাই করেছিলাম )। কিন্তু ভোট মাত্র একটা দেয়া যাবে। কিন্তু এখানে যেহেতু আমি স্বাধীন তাই একাধিক ভোট দিতে কোন বাধা নেই। কয়েকজন শিক্ষক ছাড়া আমার অনেক শিক্ষক পছন্দ তবে যাদের নাম উল্লেখ না করলেই নয় তারা হচ্ছেনঃ মিজান স্যার (খুব রাগী স্বভাবের কিন্তু কেন জানি তার ক্লাসের লেকচার শুনার জন্য চোখের পলক ফেলতে পারি না), শহীদ স্যার ( পড়াশুনার মাঝামঝি প্রচুর হাসায় তাই মনোযোগ ভাল থাকে), এছাড়া রয়েছিলেন (এখন অবসরপ্রাপ্ত ) রুবি আফরোজ ম্যাডাম (বড়ই মিস করি তার ক্লাসগুলো)।
বন্ধুবান্ধব এর কথা বলতে গেলে আমরা সবাই । ৩৬ জনের একটা বাস যাদের মধ্যে প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ হয়, কিন্তু ওই তর্কটাকে আমরা এনজয় করি । তাছাড়া ক্লাসে পচানো, কাউকে নিয়ে রম্য এগুলা তো হয়ই ।
কাছের মানুষ হিসেবেও আমরা সবাই। তবে সবচেয়ে কাছের মানুষ হিসেবে বলা যায় রাশেদ(একই মেসে থাকি ) , বিপুল (কিভাবে যেন ভাল বন্ধু হয়ে গেছি ) । ওদের দুইজনের মাঝে ঝগড়া চলতেই থাকে । আর এক জনের কথা বলা যেতে পারেঃ শহীদ স্যার ।
ক্যাম্পাসে হয়ে যাওয়া কোন বিশেষ প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান সম্পর্কে স্মৃতিচারন…..
– ক্যাম্পাসে আসার পর এ পর্যন্ত একটা প্রোগ্রাম হয়েছে (আমাদের নবীন বরন)। আরেক টা হতে গিয়েও হরতালের কারনে হয় নাই। আর নবীন বরন অনুষ্ঠান টা খুব একটা উপভোগ করতে পারি নাই। কেননা আমি একদমই নতুন । তাই নার্ভাস ছিলাম। তবে আমাদের অধ্যক্ষের বক্তব্যটা বেশ মজার ছিল। তিনি যেন আমাদের জীবনের সার্থকতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।
ক্যাম্পাসে যাওয়া থেকে একদম বাসায় ফিরে আসা পর্যন্ত প্রতিটা দিন যেভাবে কাটে……
– আমার ক্লাস সপ্তাহে ৫ দিন, রবি থেকে বৃহস্পতি । প্রতিদিন রাশেদ ঘুম থেকে উঠায়। ঊঠে গোসল করে ক্যাম্পাসে যাই। মেস হতে বেশি দূরে না ক্যাম্পাসটা। ক্লাস শেষের দিকে চলে আসলে যেন তর সয়না। আর প্রাক্টিকেল ক্লাসে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ হয়ে যাই।
ওহ! বলাই হয়নি আমি ইভিনিং ব্যাচে পড়ি। ক্লাস শুরু হয় ৩ টায় শেষ হয় ৭টা ৪০ এ। রোজার মাসে অবশ্য ১টা ৩০ হতে ৫ টা ৩০ পর্যন্ত ক্লাস ।
প্রথম ভর্তি হবার পর দেখা ক্যাম্পাস আর এখনকার ক্যাম্পাসের পার্থক্য …….
– প্রথমে ভর্তি হওয়ার পরে মনে হয়েছিল চরম ভুল করে ফেলেছি। কয়েকটা বিষয় নিয়ে খুবই নার্ভাস ছিলাম। যাই হোক আস্তে আস্তে ক্যাম্পাস টাকে ভাল লাগতে শুরু করল। এখন মনে হচ্ছে না আমি ভুল করি নাই। এটা আমার জীবনের উন্নতির জন্য অন্যতম সহায়ক একটা সিদ্ধান্ত। আর হ্যা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিককার ক্লাসে অনেক ছাত্র থাকে আর শেষে ছাত্র কমে যায়। কিন্তু আমাদের ইন্সটিটিঊটে এটা হয় নাই। ও হ্যা আরেকটা কথা ,আমাদের ইভিনিং ব্যাচে কোন মেয়ে নাই এবং আমি এটাকে খুব ভালভাবেই নিয়েছি ।
ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া বিশেষ কোন মজার ঘটনা………..
– মজার ঘটনা প্রতিনিয়ত একটার পর ঘটতে থাকে। কিন্তু সব কটা মনে রাখার মেমরি এবং লেখার জায়গাও পাওয়া যাবে না । তবে সবচেয়ে বেশি যে ঘটনাটি ঘটে সেটি উল্লেখ করছি । আমারা ইভিনিং ব্যাচ এ পড়ি। ( ৩ টা- ৭টা ৪০ ক্লাস ) ক্লাস থেকে বড়ি ফিরার অনেক আগেই অন্ধকার হয় । আবার মাঝে মাঝে অডিও ভিজুয়াল ল্যাব এভাবেই অন্ধকার রাখা হয়। তো হটাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে কে কি করে বুঝা যায় না। তবে সবার আগে মাথা সেভ রাখতে হয় । না হলে পীঠে ধুপ ধাপ । ১ মিনিট এর ভিতর জেনারেটর এসে পড়ে । তখন সব ঠিক ঠাক ।
ক্যাম্পাসের যে দিকটি সবচে বেশি ভাল লাগে………
-ক্যাম্পাসটার প্লাস পয়েন্ট হলো এটার রুম গুলো অনেক বড় । এবং বাহিরে অনেক খোলামেলা যায়গা আছে । ব্রেক এর সময় হাটা হাটী করা যায় । তাছাড়া সমস্ত প্রাক্টীকেল ক্লাস এবং থীওরি ক্লাস এর কক্ষসমুহ কাছাকাছি ।
যে দিকটি একদমই ভাল লাগে না……….
– কক্ষসমুহে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর নেই । এসি চলে গেলে গরম বেশী লাগে।
বর্তমান ক্যাম্পাসের উন্নতিতে কোন মতামত বা পরামর্শ…....
– আসলে এই ক্ষেত্র বলার তেমন কিছুই নেই। তবে দুই একটা জিনিস (যেমনঃ কয়েকটি হ্যান্ডআউটস, কম্পিঊটার ) একটু ব্যাকডেটেড। আপডেট করা জরুরি ।
ছবিগুলো তোলার সময়কার অভিজ্ঞতা ………
– ক্লাসের ফাকে ফাকে তুলেছি । তবে প্রত্যেকবারই ভয়ে ছিলাম । কে কি বলে না বলে।
এবার আমার ছবিগুলো দেবার পালা । আগেই বলে রাখি । ছবিগুলো কিন্তু বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরা দিয়ে তোলা । tongue
Students Serving Teachers by Ahmad Firoz, on Flickr
একে বলা হয় সার্ভিং । এটা কিন্তু NCCর পরীক্ষার সময় তোলা। tongue
One Side of kitchen by Ahmad Firoz, on Flickr
ট্রেইনিং কিচেন এর একটা সাইড ।
Students Testing Food by Ahmad Firoz, on Flickr
কষ্ট করে খাবার তৈরির পর এটাই সবচেয়ে মজা । নিজেদের তৈরি খাবার নিজেরাই খাই smile
another side of kitchen by Ahmad Firoz, on Flickr
কিচেনের আরেকটা সাইড । এখানে ঠান্ডা বোধ হয় একটু বেশি ।
Refrigerator of Bakery & Pastry by Ahmad Firoz, on Flickr
বেকারি ও পেস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের অনেক দামি দামি কাচামালের আখড়া tongue
Photos smile by Ahmad Firoz, on Flickr
বেকারি ও পেস্ট্রি ডিপার্টম্যান্টের একসাইডে দেখলাম টানাইয়া রাখছে ।
Staircases by Ahmad Firoz, on Flickr
আমাদের সিড়ী । এখন শান্তিতে ঊঠি নামি । কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার সময় এই সিড়ীর একটা ধাপ পার হতাম আর বুকটা ধুপ করে ঊঠতো ।
Corridor by Ahmad Firoz, on Flickr
করিডোর smile
Our classroom by Ahmad Firoz, on Flickr
আমাদের ক্লাসরুম smile । বাদরামির আড্ডাখানা । tongue
Side view of NHTTI by Ahmad Firoz, on Flickr
এক সাইড হতে এন এইচ টি টি আই কিরকম দেখা যায়? tongue
One part of language Lab by Ahmad Firoz, on Flickr
ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যবে বসা । tongue
Kitchen by Ahmad Firoz, on Flickr
কিচেন ! ট্রেইনিদের ।
Library . by Ahmad Firoz, on Flickr
লাইব্রেরি । smile
আসল টপিকঃ আমি ও আমার ক্যাম্পাস পর্ব ৫
NHTTI সম্পর্কে আরো জানতে যেতে পারেন ওদের ওয়েবসাইটেঃ http://www.nhtti.org
Leave a comment